তমলুক: মন্দিরের বয়স ৫০০০ বছরের বেশি, মন্দিরের ইতিহাস বর্ণিত মহাভারতেও, ৫১ সতীপীঠ-র মধ্যে অন্যতম দেবী বর্গভীমা আজও পূজিতা হন আচার মেনেই। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রাচীন শহর তাম্রলিপ্ত অধুনা তমলুক। তমলুকের অধিষ্ঠাত্রী দেবী বর্গভীমা। পুরানে বর্ণিত ৫১ সতীপিঠের অন্যতম এক পিঠ। জানা গিয়েছে, সতীর বাম পায়ের গোড়ালি পড়েছিল এই স্থানে। এখানে দেবী ভীমা কালী রূপে পূজিতা হন।
পুরানে কথিত রয়েছে, দক্ষযজ্ঞে সতীর দেহত্যাগের পরে তাঁর বাম পায়ের গোড়ালি সুদর্শন চক্রে খন্ডিত হয়ে এই স্থানে এসে পড়ে। এই মন্দিরের উল্লেখ মহাভারতেও রয়েছে। মহাভারতে উল্লিখিত, তমলুকের ময়ূর বংশীয় তাম্রধ্বজ রাজাই নাকি এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা। জনশ্রুতি আছে, রাজার আদেশে সেই সময় রাজ পরিবারে রোজ জ্যান্ত শোল মাছ দিতে আসতেন এক দরিদ্র ধীবরপত্নী। শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা। সারাবছর কী ভাবে জ্যান্ত মাছের জোগান দেন ওই ধীবর পত্নী? এই প্রশ্ন জাগে রাজার মনে। রাজা চেপে ধরতেই গোপন কথা ফাঁস হয়ে যায়। ধীবরপত্নী রাজাকে জানান, জঙ্গলে ঘেরা একটি কূপ থেকে জল ছিটিয়েই রোজ মরা শোলকে জ্যান্ত করে তিনি রাজ দরবারে হাজির করতেন। ধীবরপত্নীর কথামতো ওই এলাকায় রাজা গিয়ে দেখতে পান উগ্রতারা রূপী দেবী বর্গভীমার মূর্তি। সেখানেই মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন রাজা।
আরও পড়ুন: মথুরাপুরের দক্ষিণ বিষ্ণুপুরে মা করুণাময়ী কালী মন্দিরের অজানা কাহিনী
মুকুন্দরামের চন্ডীমঙ্গল কাব্যে এবং মার্কণ্ডেও পুরাণে আছে দেবী বর্গভীমার উল্লেখ। তমলুকে অতীতে কোন শক্তি পুজো হত না। শুধুমাত্র দেবীর বর্গভীমার পুজো হত। কিন্তু একসময় তমলুকে দুর্গা, জগদ্ধাত্রী পাশাপাশি কালীপুজোর প্রচলন শুরুর সময় সমস্যা দেখা দিলে তৎকালীন প্রবীণেরা নিদান দেন পূজো শুরু করার আগে দেবী বর্গভীমা মাকে পুজো দিয়ে অনুমতি নিতে হবে। এই থেকেই অনুমতি নেওয়ার নিয়ম চলে আসছে। তমলুকে ক্লাব প্রতিষ্ঠান হোক বা বাড়ির, প্রথমে দেবী বর্গভীমা মাকে পুজো দিয়ে অনুমতি নিয়ে শুরু হয় পুজো।
তমলুকের শহরে যত কালীপুজো হয় প্রত্যেক ক্লাব বা প্রতিষ্ঠান সুসজ্জিত শোভাযাত্রার মাধ্যমে দেবী বর্গভীমা মন্দিরে এসে পুজো দিয়ে তবেই তাদের কালীপুজো শুরু করে। ওড়িশি স্থাপত্যের আদলে এই দেউলের উচ্চতা প্রায় ৬০ ফুট। মন্দিরের দেওয়ালে টেরাকোটার কাজ। তার মধ্যেই মন্দিরের গর্ভগৃহে কালো পাথরে তৈরি মায়ের মূর্তি বিরাজ করছে দেবী উগ্রতারা রূপে। দীপান্বিতা অমাবস্যায় রাজরাজেশ্বরী রূপে পূজিত হন দেবী বর্গভীমা।
দেখুন খবর